বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০

কি কি প্রয়োজনে আমাদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে হবে?

কি কি প্রয়োজনে আমাদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে হবে?

বর্তমান সময়ে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখেন না, এমন কাউকে পাওয়া যাবে না। শিক্ষা মানুষের অধিকার ও জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর উচ্চ শিক্ষা মানুষের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন। আমরা সবাই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আপ্রাণ চেষ্টা করি। উচ্চ শিক্ষা কারো কাছে ফ্যাশন, কারো কাছে নিজের আত্মপ্রচার, কারো কাছে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি, কারো কাছে বিজনেস কার্ডে নিজের নামের সাথে জুড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার আসল মর্মার্থ অনেকে অনুধাবন করতে পারেন না। 

১.  মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহন করুন, পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে পুনজন্ম লাভ করুন

মানুষ হিসেবে জন্ম নিলেও পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়াটা খুব কঠিন। পরিপূর্ণ মানুষ হতে হলে আপনার জন্য শিক্ষার অবশই প্রয়োজন আছে। তাই মানুষ হয়ে জন্মগ্রহন করলেও পরিপূর্ণ মানুষ হতে কঠিন সাধনার প্রয়োজন হয়। তা হলো শিক্ষা।  কারণ শিক্ষায় লুকিয়ে আছে একজন শিক্ষিত পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার মূলমন্ত্র। বিশ্বের সাথে এগিয়ে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই পড়াশুনা করতে হবে, এবং অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যেতে হলে আপনার পড়শুনার মান উন্নত ও শক্তিশালী হতে হবে যা আপনাকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

২. নিজের বিবেককে জাগ্রত করুন

বিচার বুদ্ধির ক্ষমতাকে সুষ্ট ভাবে কাজে লাগিয়ে বিবেককে জাগ্রত করতে হলে উচ্চশিক্ষা অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। নিজেকে ও বিশ্বকে জানার পরিধি বাড়াতে হবে,  তাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষার মান যতই উপরের লেভেলে নিয়ে যাবেন, ততই নতুন কিছু ভিন্ন ভিন্ন জানতে পারবেন, আর এই জানাটাই আপনার বিবেকের সুষ্ট বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করবে।

৩. আত্মউপলব্ধি ও আত্নউন্নয়ন

প্রতিটি মানুষেই নিজেকে আপডেট ও আপগ্রেট হিসেবে দেখতে চায়। আপগ্রেট ও আপডেট থাকতে চাইলে উচ্চ শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। মনে রাখবেন, লেখাপড়া ছাড়া কখনো উন্নতি সম্ভব নয়, উচ্চশিক্ষা ছাড়া উন্নত জীবন উপলব্ধি করতে পারবেন না। নিজেকে সবসময় সংকীর্ণ ভাবতে হবে। উচ্চ শিক্ষা আত্মউপলব্ধির জন্ম দেয়, আর আত্মউন্নয়ন নিজের মনের সংকীর্ণতা পরিহার করে।  সেজন্য যতদূর সম্ভব পড়াশুনায় এগিয়ে থাকুন, বেশি বেশি জানুন, জ্ঞান অর্জনকে প্রধান্য দিন সবসময়।

৪. সৃজনশীলতার বিকাশ

সৃজনশীলরাই সমাজে সবসময় পুজনীয়। সৃজনশীলতার বিকাশে শিক্ষার কোন বিকল্প নাই। আর উচ্চ শিক্ষা সৃজনশীলতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।  আপনার সৃষ্টির জগত, চিন্তা চেতনা, মনন, মেধাকে আরো শক্তিশালী করতে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোন। লেখাপড়া করুন, সবসময় বই পত্র ঘাটাঘাটি করুন। নিজের বাসায় চাইলে ছোট্ট একটা লাইব্রেরী বানাতে পারেন। লাইব্রেরীতে বিশ্বের সকল সৃজনশীল ও পরিশ্রমী ব্যক্তিদের জীবনী রাখুন, একেক দিন এক একটা জীবনী পড়ুন। এই জীবনী গুলো আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

৫. শুধু মোবাইল ফোন স্মার্ট হবে কেন, শিক্ষা জীবনও স্মার্ট হোক

আমরা সবসময় সময়ের সাথে তাল মিলানোর জন্য আপগ্রেট স্মার্ট ফোন এর জন্য অপেক্ষা করি। আপগ্রেট স্মার্ট ফোন ছাড়া নিজেকে আন-স্মার্ট মনে হয়। অন্যের চোখ দিয়ে যখন নিজেকে দেখি, তখন অন্যের সাথে তফাতটাও বুঝতে পারি। ফোনের মতো নিজের শিক্ষা জীবনকে আপগ্রেট করে স্মার্ট থাকুন।  একটি স্মার্ট ফোনের ক্রয় মূল্য ও সেবা মূল্য যেমন আপনি বুঝেন, আপনার উচ্চতর পড়াশুনার মূল্যও সমাজ  পরিবার বুঝবে আপনার চেয়েও বেশী। তাই যতটুকু সম্ভব উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যান।

৬. অন্যদের অভিজ্ঞতার সাথে নিজের জ্ঞানের সমন্বয়

উচ্চ শিক্ষা আপনাকে অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে নিজের জ্ঞানের সমন্বয় সাধনে সাহায্য করবে। আপনি লাইব্রেরীতে অনেক বই পাবেন, অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিদের সান্নিধ্য লাভ করবেন। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষই আলাদা আলাদা অভিজ্ঞতা ও প্রতিভা সম্পন্ন। তাদের সান্নিধ্য পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে তাদের সমকক্ষ না হোন, তাদের লেবেলের কাছাকাছি হলেও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহন করতে হবে। তাদের অভিজ্ঞতায় আপনার শিক্ষার সমন্বয় করে আপনার প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য উচ্চ শিক্ষা একান্ত জরুরী।

৭. অন্যকে জ্ঞান দানে আনন্দিত হোন

আমাদের জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে কারো সামনে একবার নয় বহুবার নিজের আজান্তে শিক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হই। যে শিক্ষা দানে আনন্দ পায়, সে অন্যকেও আনন্দ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।  যখন কাউকে আপনি কোন টপিক বুঝিয়ে দিবেন কিংবা আপনার কাছে কোন টপিক বুঝতে আসবে, মনে রাখবেন নিজেকে সেই টপিক সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান আহরন করতে হবে। টপিক সম্পর্কে যে কোন প্রশ্নের উত্তর রেফারেন্স সহ দেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। এতে আপনি অন্যকে পড়িয়ে যে রকম আনন্দ লাভ করবেন, অন্যরা আপনার কাছ থেকে শিখে সেই রকম আনন্দ পাবেন। তাই উচ্চ শিক্ষা লাভ করে নিজে বেশী বেশী জানুন আর অন্যকে সেইটা বুঝিয়ে জানিয়ে আনন্দ লাভ করুন।

৮. যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধি

যতই উচ্চ শিক্ষিত হবেন ততই সামাজিক ও বৈশ্বিক যোগাযোগে আপনি এগিয়ে থাকবেন। উচ্চ শিক্ষা আপনার যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। আপনি যোগাযোগ বৈকল্য নিয়ে আলোচনা করুন, বিভিন্ন দেশের ভাষা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করুন। যার ফলে আপনি যেকোন দেশের সাথে সহজেই যোগাযোগ করতে পারবেন, যেকোন দেশের মানুষের সাথে খুব সহজেই দ্বিধাহীন কথা বলতে পারবেন।

৯. কল্পনাশক্তির উন্নয়ন

প্রতিটি মানুষই কল্পনা করার ক্ষমতা রাখে। সবার কল্পনাশক্তি যেমন এক নয়, তেমনি সবার কল্পনার মানও একনয়। উচ্চতর পড়াশুনা আপনার কল্পনার জগতকে বাস্তবে পরিণত করার রাস্তা খুঁজে দিবে। অন্যরা যা কল্পনা করে, আপনারটা তাদের চেয়েও ভিন্ন হবে। কারণ আপনি পড়াশুনায় জ্ঞান অর্জনে তাদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। আপনার কল্পনাকে আপনার গাইড ভাবুন, এই গাইডকে যতবেশি শক্তিশালী করবেন আপনি তত বেশি আত্নপ্রত্যয়ী ও দূরদর্শিতা সম্পন্ন হবেন এবং অন্যের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন।

১০. বিনয়ী, সহনশীল ও ধৈর্য্যশীল হতে সাহায্য করে

উচ্চতর পড়াশুনা আপনাকে বেশী বেশী বিনয়ী, সহনশীল ও ধৈর্য্যশীল হতে সাহায্য করবে। জ্ঞানী মানুষ কখনো ধৈর্য্য হারায় না, বিপদ আপদ খুব সহজে মোকাবিলা করতে পারে। আপনি যতই পড়াশুনায় এগিয়ে থাকবেন, আপনি ততই বিনয়ী হবেন। আপনি যতই বিনয়ী হবেন, আপনার সামজিক মর্যাদা ততই বাড়বে। তাই বিনয়ী, সহনশীল ও ধৈর্যশীল হতে হলে আপনাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। 
 
 উইলিয়াম শেকসপিয়র বলেছেন "সাফল্যের ৩ টি শর্ত" :

১) অন্যের থেকে বেশি জানুন। ২) অন্যের থেকে বেশী বেশী পরিশ্রম করুন। ৩) অন্যের থেকে কম আশা করুন।

Blog Writer : Syed J Hossain 

Share This
Previous Post
Next Post

Ashalamu-alaikum, I'm Shariar Mahamud Kabbo. I'm a Healthcare Professional . Welcome To My Largest Free Medical Books Download Site.

0 মন্তব্য(গুলি):