শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২০

Pneumonia ( নিউমোনিয়া )

Pneumonia ( নিউমোনিয়া )


বেবিদের অসুখ নিয়ে যখন ইনফরমে ছিলাম তখন মনে পরে গেল নিউমোনিয়ার কথা- বিশেষ ভাবে মনে হল ছোট বেলার কথা, যখন কোন বেবির জ্বর উঠার পর লাল,বেগুনি ও কাল রঙের মুখ দেখা দিত, তখন আমাদের মা- দাদিরা বলতেন টাকরা টুকরি ধরেছে ( সিলেটি আঞ্চলিক ভাষা ) তখন ঐ বেবিকে ফু ঝাড়– তাবিজ কবজ দিয়ে ভাল করার চেস্টা করতেন। অবশ্য কেউ কেউ ভাল হয়ে যেত আবার কেউ কেউ এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে যেত। কিন্তু বাস্তবে তা নয় (মুলত ইহা ভুল ছিল ) অর্থাৎ যাদের শরিরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল ছিল তারাই ভাল হয়ে যেত। শরীরের এন্টিবডির কারনে, তবে সত্য একটা কথা বলতেই হয় , তখনকার সময় প্রত্যেক বেবিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বর্তমান সময়ের চাইতে অনেক ভাল ছিল।  তার একমাত্র কারন পুস্টি জনিত খাবার ছিল বেশি।  মুলত বৈজ্ঞানিক ভাবে এই তকের রঙ বদলানোর মুল কারন হচ্ছে রক্তে ভালভবে অক্সিজেন না মেশার দরুন মাঝে মাঝে রোগীদের ত্বকের রং পালটে কালচে বা বেগুনি হয়,  যাকে চিকিৎসকরা “সায়ানোসিস” বলে থাকেন।  এখন ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের প্রধান ঘাতক রোগ নিউমোনিয়া কে বলা হয়।  বিশ্বজুড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে প্রাণ হারায় একজন শিশু। গড়ে শিশু মৃত্যুর এই হার এইডস ও ম্যালেরিয়ায় সম্মিলিত প্রাণহানির চেয়েও বেশি।

নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগ। সাধারণত ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমনের কারণে নিউমোনিয়া হয়। আর 'নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া স্ট্রেপটকক্কাস নিউমোনি’ বা হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা নামের জিবানু দ্বারা সংঘটিত নিউমোনিয়ার নাম ‘নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া’। সাধারনত দুই বছরের কম বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয় । যা বাহকের শ্বাস নালীর উর্দ্ধভাগে এ রোগের জীবানু বাসা বেঁধে থাকে। সুতরাং বাহক অথবা আক্রান্ত ব্যাক্তির হাঁচি কাশি এমনকি শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে কাছে অবস্থানরত মানুষেরা সহজেই আক্রান্ত হতে পারে।আমরা জানি ফুসফুসের ভিতর ছোট ছোট কত গুলী এলভিওলাসের সমষ্টির ধারা তৈরি যা স্পঞ্জের মতো নরম ও স্থিতি স্থাপক, নিউমোনিয়া বা ফুসফুসে প্রদাহ হলে ফুসফুসের এই এলভিওলাইসগুলো স্পঞ্জের মতো আর নরম থাকে না। তখন যকৃত বা কলিজার মতো শক্ত হয়ে যায়। ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের সময় সঙ্কোচন ও প্রসারণে বাধা পায় এবং শ্বাস কষ্ট হয়। সব বয়সের মানুষেরই নিউমোনিয়া হতে পারে। তবে শিশু ও বার্ধক্যদের বেলায় নিউমোনিয়া বেশি হয়। কারন এদের শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার দুর্বল থাকে বলে।  এ ভাবে একাধিক অঞ্চলের অ্যালভিওলাইগুলি জিবানুর দ্বারা সংক্রামিত হয় তাড়া তাড়ি।  তখন ফুসফুসের ভিলাই গুলিতে পানি জমে গিয়ে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে যাকে কনজেশন জাতিয় নিউমোনিয়াযা বলা হয় । 

নিউমোনিয়ার কারণঃ 

ফুসফুসে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাল, ক্যালামিডিয়াল, ইস্ট, ছত্রাক বা এলার্জি এবং প্রোটোজোয়ার অথবা ক্যামিক্যাল পদার্থের সংস্পর্শে বা আক্রমণে নিউমোনিয়া হতে পারে । 

কিভাবে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটেঃ

ফুসফুসে যে প্রাথমিক বা প্রাইমারি নিউমোনিয়া হয়, তা মুলত পরিবেশ থেকে জীবাণু শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে বা সংক্রামিত ব্যক্তিদের কাশির সময় তরলকণিকা শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে ৷ এটি জনসম্প্রদায় থেকে আসে তাই অতিরিক্ত ভিড় ও শীত ঋতুতে এই রোগের প্রকোপ বাড়ে ৷ আবার কিছু কিছু নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটে নিশ্বাসের সঙ্গে নিউমোনিয়ার জীবাণুযুক্ত অতি ক্ষুদ্র তরলকণিকা গ্রহণের ফলে৷ এই তরলকণিকা গুলি বাতাসে মিশে যায়, তারপরে জীবাণুগুলি ফুসফুসে প্রবেশ করে (এই জীবাণুগুলি ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক বা অন্য রাসায়নিক বা যন্ত্রণাদায়ক বস্তুকণিকা হতে পারে ) এবং তারপরে অ্যালভিওলাইয়ে ঢুকে গিয়ে প্রদাহের সৃষ্টি করে সুস্থ অ্যালভিওলাইয়ে বিজাতীয় বস্তুর উপস্থিতি স্বাভাবিক ভাবেই সেটি তাড়িয়ে দেবার জন্য একটি ইমিউন প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়৷ এর ফলে ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া ও শ্বেত রক্ত কণিকা সহ তরল শ্লেষ্মা জমা হয়৷ তার ফলে ফুসফুসের মূল অংশে কনজেশন ও প্রদাহ সৃষ্টি হয় যাকে এবং একেই চিকিৎসকরা নিউমোনিয়া বলে থাকেন। অথবা, যাদের প্রতিরোধশক্তি কম এবং শারীরিক চালনব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদেরই শ্বাসনালীর উপরিভাগের সংক্রমণ বা সামগ্রিক কোন রোগের মাধ্যমে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে৷ মুখ, গলা, বা নাকে স্বাভাবিকভাবে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া কোনোভাবে ফুসফুসে ঢুকে গেলে নিউমোনিয়া হয়৷ যারা অন্য কোন রোগের প্রকোপে দুর্বল হয়ে পড়েন, তাদের বেলায় জীবাণুগুলি খুভ তাড়াতাড়ি ফুসফুসের বায়ুথলিগুলিতে আশ্রয় নেয় ও দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে থাকে৷ শরীর সংক্রমণটির সঙ্গে লড়তে থাকায় ফুসফুসের এই এলাকাটি তখন তরল ও পূঁজে ভরে যায়৷ যা পরবর্তীতে মারাত্মক অবস্তা ধারন করে।  

লক্ষণ ও উপসর্গগুলোঃ

নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর প্রথমে সর্দি লাগার লক্ষণ দেখা যায় পরে জ্বর ১০৩-১০৪ ফারেনহাইট ও কাঁপুনি দিয়ে শীত করা অনুভব হতে পারে , বমি ( অনেক সময় না থাকতে পারে ) খিচুনি ভাব, কফ বা -শুষ্ক কফ, লোকালাইজড (চেস্ট পেইন) বুক ব্যথা, রোগীদের শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যাওয়া, শিশুর স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাসের গতি ২৫-৪০ বার/মিনিট ( শিশুদের বেলায় খুবি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় ইহা সর্দি জ্বর হবে ? প্রথমত সর্দিকাশি, জ্বরের সঙ্গে শিশু যদি খুব দ্রুত নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে, দুই বছরের কম বয়সের শিশু যদি প্রতি মিনিটে ৫০ বারের বেশি নিঃশ্বাস নেয় এবং দুই বছরের বেশি বয়সের শিশু যদি প্রতি মিনিটে ৪০ বারের বেশি নিঃশ্বাস নেয়, তাহলে বুঝতে হবে এটা সাধারণ সর্দিজ্বর নয়। দ্বিতীয়ত, শান্ত থাকা অবস্থায় শিশুর যদি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নিঃশ্বাস নিতে গেলে ঘড়ঘড় আওয়াজ হয়, তাহলে তা নিউমোনিয়ার লক্ষণ ভাবতে হবে সাথে পেট ও বুকের নামা উঠা অন্য সময়ের চাইতে খুভ বেশি ) -রোগীর নাড়ীর গতি বৃদ্ধি পায়, রোগীর শ্বাস কষ্ট হয়, শ্বাস প্রশ্বাসের সময় নাকের পাতা উঠা নামা করে, রোগীর শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে গর গর শব্দ হয়। রোগ মারাত্মক হলে শরীরে অক্সিজেনের অভাবে চামড়া নীল হয়ে যায় এবং শ্বাস নেয়ার ক্ষেত্রে বুক উঠা নামা করে অন্য রকম।

জটিলতাঃ
ফুসফুসের অ্যাবসেস বা ঘা ম্যানিনজাইটিস, সেপটিক আর্থ্রাইটিস, এন্ডোকার্ডিয়াটাইটিস, অ্যাকুইট রেসপেরটরী ডিস্ট্রস সিনড্রম,  রক্তপ্রবাহে (Blood Stream) জীবাণুর সংক্রমণ, ফুসফুসের চারপাশে তরল জমা এবং সংক্রমণ (Fluid accumulation and indection around lungs), তীব্র শ্বাসকষ্ট বা একিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনেড্রাম (Acute respiratory distress syndrome.

 শিশু বিশেষজ্ঞদের মতেঃ

বাচ্চদের বেলায় নিউমোক্কাল জীবানু যে কেবল সেখানেই বসে থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। সুযোগ পেলেই খুভ দ্রুত রক্তে ছড়িয়ে পরতে পারে, তাকে বলে ‘ব্যাকটেরিমিয়া’। যার জন্য মারাত্মক খিঁচুনি দেখা যায় ( সেখান থেকে যখন তা অন্যান্য অংগে আক্রমন করে তখন তাকে বলা হয় ‘সেপটিসেমিয়া’। প্রধানত মস্তিস্কে আক্রমন করে ‘ম্যানিনজাইটিস’ রোগ ঘটাতে পারে, যা খুভি জটিল , তখন শিশুর খিচুনি হয়। রক্ত থেকে মধ্য কর্নে রোগ ছড়াতে পারে, এটার সম্ভাবনা খুব বেশী। এছাড়াও রোগটি হৃদপিন্ডেও ছড়াতে পারে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এ রোগের জটিলতা সাড়া দেহ জুড়ে ও এতে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রচুর। শিশুদের ফুসফুসের রোগ থাকলে-যেমন অ্যাজমা, সিস্টিক ফাইব্রোসিস (যেখানে পাকস্থলী, প্যানক্রিয়াস প্রভৃতি জায়গায় দেহের মিউকোসাল) সিক্রেশন চটচটে হয় বলে ফুসফুসে ইনফেকশন হয় শিশুর শ্বাসনালি ও খাদ্যনালি জোড়া থাকলে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে খাবার খেলে সেটা শ্বাসনালিতে ঢুকে যায় শিশু যা খায় তাই বমি করে ফেলে দেয় বা খাবার পেট থেকে ফুসফুসে ফেরত চলে যায়, পেশি দুর্বল থাকলে আক্রান্ত শিশুরা ভালো করে কাশি দিয়ে কফ বের করতে পারে না। খাবার শ্বাসনালিতে ঢুকলেও কাশি দিতে পারে না, অনেকের জন্ম থেকেই প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে এ রোগ বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে । এ ছাড়া এইডস, থ্যালাসেমিয়া হলেও প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকায় নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। শিশু বিশেষজ্ঞের মতে শিশুদের যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাই ছোঁয়াচে বলা যেতে পারে। শিশুদের নাকে-কানে নিউমোনিয়ার ব্যাকটেরিয়া মজুদ থাকে। ) এই অসুখ হলে যা প্রথমে যা দেখা যায়, নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় শিশুর পেট ভেতরে ঢুকে যাওয়া । নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় নাক ফুলে উঠা । মুখ ও ঠোঁটের চারপাশ নীল হওয়া , সঙ্গে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর থাকে ।বুকে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া । এ অবস্থায় সাধারণত শিশু বুকের যেদিকে ব্যথা করে সেদিকটা ধরে রাখার চেস্টা করে । যেদিকে ব্যথা সেই দিকে পাশ ফিরে শুয়ে থাকে। হাঁটু মুড়ে, হাঁটুটাকে বুকের কাছে এনে পাশ ফিরে থাকে।ঘন ঘন শুকনো কাশি বা কাশি হতে থাকলেও কফ বের করতে না পারা । সব সময় মনে একটা অস্বস্তি, দুশ্চিন্তার মতো থাকবেই । বেশির ভাগ চার বছরের কম বেশি শিশুরা আক্রান্ত হলে ও নব জাতক শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় যা অনেক সময় মায়েরা কিছু বুজার আগেই বারটা বেজে যেতে পারে।

পরীক্ষাঃ

হা আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে নিউমোনিয়া ভাইরসের জন্য না ব্যাকটেরিয়ার জন্য হয়েছে সে জন্য ব্লাড টেস্ট ও এনালাইসিস করাতে হবে। ফুসফুসে কোন জায়গায় বেশি আক্রমণ বা কি অবস্তা সে জন্য এক্সরে করাতে হবে।  তা ছাড়া মারাত্মক পর্যায়ে কফ কালচার, সিটি চেস্ট-ব্রঙ্কোস্কপি ( ফুস্ফুসের ভিতর সরা সরি দেখা )  এবং অনেক সময় ফুসফুসে জমে থাকা ফ্লুইড কালচার করতে হয়।  তবে সিরিয়াস ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা এ সব পরীক্ষা করা ভাল যদি রোগি শিশু হয়।

চিকিৎসাঃ

হা অবশ্যই এন্টিবায়োটিক নিউমোনিয়ার প্রধান ঔষধ।  কিন্তু তা নির্ভর করবে আপনার কোন ধরনের ব্যাক্টোরিয়া /ভাইরাস আক্রমণ করছে তা বুজা র উপর।  সাধারনত সেপালস্পিরিন খুবি ভাল রেজাল্ট দিয়েছে বর্তমানে ( তবে ইহা ও আগামিতে হিউমেন ইমুইনেজশন পরিবর্তনের কারনে ঠিক রেজাল্ট না ও পেতে পারেন ) Cephalosporin, is newly approved- সাধারনত ইহা ৭/৮ দিনে পূর্ণ সুস্ত হওয়ার কথা। তার পর ও রোগটি ভাইরাস না ব্যাক্টোরিয়া জনিত হয়েছে তা বুঝে ব্যাবস্তা নিলে ৯৯% সম্ভাবনা ভাল হয়ে যাবেন একেবারে নিশ্চিত ( আমার মতে রোগি যদি শিশু হয় তবে ২৪/৪৮ ঘন্টার উপরে কখন ও নরমাল অভজারবেশনে রাখবেন না তখন অবশ্যই ক্লিনিকেল অভজারবেশনে দরকার , তার কারন বাচ্চার কফ ও অন্যান্য কারনে বাচ্চার নাখ মুখ বন্ধ হয়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে ( কেন না সে সময় বাচ্চাদের কফ মেসিনের সাহায্যে বাহির করার দরকার হতে পারে , এবং ভাইরাস জনিত হলে ইহা খুব দ্রুত বেড়ে যায়  যদি বাচ্চার অপুষ্টি বেশি জনিত সমস্যা থাকে ) হা আমি নিজে দেখেছি এভাবে অনেক বাচ্চা মারা যেতে। বিশেষ করে মা ঘুমিয়ে আছেন এবং অবহেলা জনিত বা না জানার কারনে বাচ্চার মুখে জোর করে দুধ দিয়ে ছেন সারা রাত কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার শুনা মনি আর নেই। তাই দয়া করে সতর্ক থাকবেন। বাচ্চার নাকে তৈলাক্ত ফোঁটা দেওয়া, দুর্ঘটনাক্রমে কেরোসিন বা ঐ জাতিয় কিছু যাতে নিঃশ্বাসের সেথে ভেতরে চলে না যায় ইত্যাদি খেয়াল রাখবেন ) সাথে চিকিৎসকরা এন্টিহিস্টামিন ও কফ ডাইলেশনের জন্য ভেন্টিলন জাতিয় ঔষধ দিয়ে থাকেন।  তবে যদি মারাত্মক আকারে ধারন করে অবশ্যই রোগীকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক্স ও ইনহেলার এবং অক্সিজেন এবং যদি কফ বাহির না হয় সে জন্য ডাইলেটরের মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্তা না করলে অনেক সময় রোগিকে বাচা কস্ট সাধ্য হতে পারে। প্রতিরোধ হিসাবে যারা অপুষ্টি জনিত ভুগতেছেন এবং দেখা যায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্বাভনা তাদের বেলায় নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়া ভেক্সিন দিয়ে রাখা ভাল (দেড় মাস থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের জন্য এই ভেক্সিনের ডোজ হলো চারটি, সাত থেকে এগারো মাস বয়সে তিন ডোজ, বার মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সে দুই ডোজ দিতে হবে।  এ ছাড়া সুুখবর হলো বাচ্চাদের জন্য এখন মুখের স্প্রে হিসাবে ও ভেক্সিন দেওয়া যায়। তা ছাড়া স্বাভাবিক ভাবে আক্রান্ত দের বেলায় কাশি নিবারনের জন্য একক ভেষজের ব্যবহার তুলসী পাতার রস ১৫-২০ মিলি মধুর সাথে দিনে ২ বার সেব্য, বাশক পাতার রস ১৫-২০ মিলি দিনে মধুর সাথে সকাল-বিকাল সেব্য, আদার রস ২-৫ মিলি সম পরিমাণ মধুর সাথে সকাল-বিকাল সেব্য, রসুনের রস ২-৫ মিলি সম পরিমাণ মধুর সাথে সকাল-বিকাল সেব্য ( যে কোন একটি ব্যাবহার করতে পারেন ) তবে মনে রাখবেন এন্টিবায়োটিক হচ্ছে মুল ঔষধ – অন্যান্য যা কিছু আছে সব ই সহযোগি বলতে পারেন।

প্রতিরোধঃ

সত্য কথা বলতে কি আমাদের তৃতীয় বিশ্বে এ রোগের জন্য প্রতিরোধ বলতে যা বুঝি একটু বাড়তি সতর্কতা ও সন্দেহ ভাজনদের ভেক্সিন দেওয়া ভাল। এ ছাড়া আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় যাহাতে বেশি ঠান্ডা না লাগে, গরমের সময় ঘেমে বা মেঘ বৃষ্টিতে সর্দি কাশি ইত্যাদি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা। আর নতুন গবেষনায় দেখা যাইতেছে যাদের জিঙ্ক এর অভাব তাদের হওয়ার সম্বাভনা বেশি তাই বেশি করে জিঙ্ক যে খাদ্যতে তে থাকে তা প্রচুর পরিমানে খাওয়ার চেস্টা করবেন। ( কচি মুরগির মাংস, পনির, মসুর ডাল, শিম, কর্নফ্লেক্স, চিঁড়া ইত্যাদি )  মুলত সব কিছুর পর গন সচেতনতাই হচ্ছে মুল প্রতিরোধ।

ধন্যবাদ
ডাঃ মোঃ রকিবুল হাসান সুমন
ডিএমএফ, ঢাকা

শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০২০

বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা এখন জনগণের দোরগোড়ায়!

বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্য সেবা এখন জনগণের দোরগোড়ায়!


আমাদের দেশের জনগনের বড় অংশ বসবাস করেন গ্রামে।
সুতরাং গ্রামের মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনলায় ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দেওয়ার লক্ষে প্রায় প্রত্যেক ওয়ার্ডে একটি করে সরকারী  কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছেন।
ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌছানোর লক্ষে দেশের  অধিকাংশ ইউনিয়নে স্থাপন করেছেন সরকারী ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র।
উপজেলা  পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌছানোর লক্ষে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সরকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপন করেছেন।
জেলা শহর পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা পৌছে দেওয়ার লক্ষে প্রতিটি জেলায় রয়েছে সরকারী জেলা সদর বা জেনারেল  হাসপাতাল।
বিভাগীয় পর্যায়ে রয়েছে  সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
আর রাজধানীতে রয়েছে বিভিন্ন বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা  বিশেষায়িত সরকারী হাসপাতাল।  
আসূন এবার  দেখে নেওয়া যাক কি কি সেবা পাওয়া যায় সরকারী এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং হাসপাতাল  থেকে –
→ কমিউনিটি  ক্লিনিকের সেবা সমূহ:
১.মহিলাদের প্রসব-পূর্ব (গভকালীন), প্রশবকালীন, প্রসব-উত্তর অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদান এবং কোন জটিলতা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব জরুরী প্রসূতি সেবা কেন্দ্রে প্রেরন করা হবে ।
২. সদ্য প্রশতি মা(৬ সপ্তাহের মধ্যে) এবং শিশুদের (বিশেষত মারাত্বক পুষ্টিহীন, দীঘমেয়াদী ডায়ারিয়া এবং হামে আক্রন্ত) ভিটামিন এ ক্যাপসুল প্রদান ।
৩.মহিলা ও কিশোরীদের রক্তস্বল্পতা সনাক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় প্রাথমিক ওষুধ প্রদান,  কিশোর কিশোরীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ প্রদান ।
৪. ইপিআই সিডিউল অনুযায়ী শিশুদের প্রতিষোদক (যক্ষা, ডিপথেরিয়া,হুপিং কফ, পোলিও ধনুষ্টংকার, হাম,হেপাটাইটিস-বি এবং ১৫-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের ধনুষ্টংকার প্রতিষেধক টিকাদান,
৫. ১৫ বছর বয়সের নিচের শিশুদের মধ্যে সন্দেহজনক একিউট ফ্লাক্সিড প্যারালাইসিস (এএফপি)সনাক্ত করে রেফার করা।
৬.সদ্যবিবাহিত ও অান্ত:সত্তা মহিলাদের নিবন্ধন করন , সম্ভব প্রসব তারিখ সমাগত হলে যোগাযোগ করা,জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত করা ।
৭. নবজাতকের অত্যাবশ্যকীয় সেবা প্রদান ।
→ ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা সমূহ-
১.স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আগত নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-যুব-শিশু সকলকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়।
২.ডায়রিয়া রোগীদের জন্য ও আরএস সরবরাহ করা হয়।
৩. হাসপাতালে আগত প্রসূতি রোগীদের এন্টিনেটাল চেকআপসহ প্রয়োজনীয় উপদেশ দেয়া হয় এবংআয়রন ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়।
৩. জাতীয় যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের আওতায় যক্ষ্মা রোগীদের কফ পরীক্ষার জন্য কফ কালেকশন করা হয় এবং যক্ষ্মা কুষ্ঠ রোগীদের বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ কর হয়।
৪.শিশু ও মহিলাদের ইপিআই কার্যক্রমের আওতায় প্রতিষেধক টিকা দেয়া হয়।
৫.উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আগত রোগীদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়া হয়।
৬.উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আগত কিশোর-কিশোরী ও নব দম্পতিদের মধ্যে প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
৭.প্রয়োজনে রোগীকে উপজেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়।
→ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা সমূহ-
এখানে তিনটি বিভাগে ভাগ করা হয় হাসপাতালকে।
যেমন – জরুরী বিভাগ,বর্হিঃবিভাগ আর আন্তঃবিভাগ।
১.বহি:বিভাগে চিকিৎসা সেবা সমুহঃ-
বহি: বিভাগে আগতরোগীদের অবস্থাভেদে প্রয়োজনীয়  চিকিৎসা ও বিনামূল্যে  ঔষধ সরবরাহ করা হয়।
জটিল রোগীদের রোগ নির্ণয়ের জন্য বিনামূল্যে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা, এক্স-রে, ইসিজি ইত্যাদি করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। তাছাড়া চিকিৎসা সার্থে আসা রোগীদেরকে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন স্বাস্থ্য শিক্ষামূলক তথ্য প্রদর্শন করা হয়।
জটিল রোগীদের প্রয়োজনে হাসপাতালের অন্ত:বিভাগে ভর্তি করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়।
তাছাড়া প্রসূতিরোগীদের  প্রসবপূর্বও প্রসবোত্তর  সেবাও প্রদান করা হয়।
২.অন্ত:বিভাগে চিকিৎসা সেবা :
জটিল ও কঠিন রোগীদের হাসপাতালের অন্ত:বিভাগে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান সহ বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ, পথ্য সরবরাহ, ডেলিভারী সহ বিভিন্ন প্রকার মাইনর অপারেশন করা হয়। মুমূর্ষ রোগীদের উন্নততর চিকিৎসার জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ায় সরকারী এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে জেলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  রোগী রেফার করা হয়।
৩.জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা :
সার্বক্ষণিক  জরুরী বিভাগ খোলা রেখে যেকোন দূর্ঘটনায় আহতরোগীদের দ্রুত ব্যবস্থাপনা, কুকুরের কামড়, পানিতেডোবা ইত্যাদি রোগীসহ যাবতীয় ইমার্জেন্সী রোগীদের তাৎক্ষনিক চিকিৎসা প্রদান করে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা উন্নততর চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতাল অথবা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
তাছাড়া  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারী মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রোগীদের প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ প্রদান করা হয়।
এছাড়া টিকাদান কর্মসূচী :
টিকাদান কর্মসূচীর মাধ্যমে  শিশুদের ডিফথেরিয়া, পোলিও, হুপিং কাশি, ধনুষ্টংকার, যক্ষা, হাম, জন্ডিস ও মেনিনজাইটিস -এই ৮টি মারাত্মক রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদান করে শিশুদেরকে  উল্লেখিত রোগের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা হয়।
→ জেলা সদর হাসপাতালের সেবা সমূহ-
এখানেও তিনটি বিভাগে হাসপাতাল ভাগ করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
যেমন-
 ১) অন্তঃবিভাগ
 ২)বহিঃবিভাগ
 ৩)জরুরী বিভাগ
→ সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সেবা সমূহ-
এখানে মাত্র ১০ টাকার টিকিট দিয়ে জরুরী বিভাগ,বর্হিঃবিভাগ ও ২০ টাকায় আন্তঃবিভাগে ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন, সল্প খরচে পরিক্ষা নিরিক্ষা করতে পারবেন এবং সরকারিভাবে বিনা মূল্যে ওষুধ পাবেন।
এখানে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা অপারেশন এর ব্যবস্থা থাকে এবং যেকোনো অপারেশন বিনা মূল্যে শুধু ঔষুধের সামান্য খরচ হয়।
আপনি চাইলে বিশেষায়িত হাসপাতালে আরও উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন খুবই স্বল্প খরচে।
এছাড়াও বিনা মূল্যে আরও বিভিন্ন ধরনের সেবা পাবেন সরকারী হাসপাতাল থেকে।

 Blog Writer : রাকিব হাসান অভি

বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০

প্রেসক্রিপশন এর Rx শব্দের উৎপত্তি


অনেকেই প্রায়শ জিজ্ঞেস করে থাকেন প্রেসক্রিপশন এ ওষুধের নামের শুরুতে লেখা Rx এর মানে কি? আমি কয়েকটা জানতাম, পরে দেখি Rx চিহ্ন নিয়ে আরো বেশ কয়েকটি মতবাদ প্রচলিত আছে:

চিকিৎসা শাস্ত্রের মতে Rx একটি ল্যটিন শব্দ যা ‘Recipe’ ও ‘to take’ এই দুটো ইংরেজি শব্দ বোঝায়। Recipe এর অনেকগুলো মানে যার একটি হল 'ওষুধের ব্যবস্থাপত্র' এবং অন্যদিকে to take হল 'আপনি নিন' বা 'গ্রহণ করুন'

Rx হল বৃহস্পতি গ্রহের Astrological সাইন। এই বৃহস্পতি গ্রহের নাম ইংরেজিতে Jupiter যা কিনা রোমানদের বিশ্বাসে দেবতাদের রাজা। Rx লেখা হয় এই জন্য যে প্রেসক্রিপশনে লিখা ওষুধের উপর রোমান দেবতা Jupiter যেন শুভদৃষ্টি রাখেন এবং রোগী আরোগ্য লাভ করে।

প্রাচীন মিশরীয়দের মধ্যে ‘উটচাট’ বা ‘হোরাসের চোখ’ নামে এক ধরনের কবচের প্রচলন ছিল। হোরাস হচ্ছেন একজন স্বাস্থ্য দেবতা। ‘হোরাসের চোখ’ নামে যে কবচ প্রচলিত ছিল তা অনেক রোগ প্রতিরোধ করত, এই কবচের প্রাথমিক আকৃতি অনেকটা Rx এর মত দেখতে।

ভিন্ন মতানুসারে Rx এর R = Refer to এবং X = Jesus Christ, অর্থাৎ Rx = Refer to Jesus Christ, মানে ‘যিশুর নামে পড়া শুরু করুন’, মুসলিমরা যেমন পড়েন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বা ‘মহান আল্লাহর নামে পড়া শুরু করছি’ অনেকটা তেমন।

কেউ কেউ বলে থাকেন, Rx মানে Report extended। রোগীর শরীরের সমস্যা বা রোগ নির্নয় করে extended যে রিপোর্ট করা হয় যেখানে পরবর্তি পদক্ষেপ বা চিকিৎসা ব্যবস্থা বর্ণিত থাকে তাই সেখানে Rx লেখা থাকে।

কেউ বলে Rx এর R হল Remedy যার অর্থ আরোগ্যকর ওষুধ।

এইতো এতটুকুই জানি। থাকতে পারে আরো অর্থ :-)

বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০

সেক্সুয়াল ডাইমরফিজমের (Sexual Dimorphism) বলে একটা জিনিস আছে।

সেক্সুয়াল ডাইমরফিজমের (Sexual Dimorphism) বলে একটা জিনিস আছে।

ব্যাপারটা হল- স্ত্রী ও পুরুষ প্রজাতির শারিরীক গঠনে স্পষ্ট কিছু পার্থক্য থাকবে। ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং। আজমল স্যারের প্রাণিবিজ্ঞান পড়ার সময় আমার মনে প্রায়ই প্রশ্ন জাগত-

১। স্ত্রীদের হৃদপিন্ড কেন পুরুষের চেয়ে ছোট?
২। স্ত্রীদের পেশি কেন পুরুষের চেয়ে কম? কেন স্ত্রীরা জিম করলে পুরুষের মত পেশি ফুলে উঠে না?
৩। কেন স্ত্রীদের বৃক্ক, পুরুষের বৃক্ক অপেক্ষা ওজনে ও আঁকারে ছোট?
৪। কেন স্ত্রীদের স্তন থাকে, পুরুষের স্তন কেন নিষ্ক্রিয়?
৫। কেন স্ত্রীদের কোমরের (শ্রোণিদেশ) অস্থিগুলোর ব্যাস বেশি, কেন পুরুষের ক্ষেত্রে সংকুচিত?
৬। কেন স্ত্রীদের চেয়ে পুরুষরা বেশিই হিংস্র?
৭। স্ত্রীদের চামড়া কেন মোলায়েম, উজ্জ্বল এবং নরম। কেন পুরুষের চামড়া আলাদা?
৮। কেন পুরুষের শক্তি বেশি স্ত্রীদের তুলনায় বেশি?
৯। কেন স্ত্রীরা পাখির মত খুটিয়ে খুটিয়ে খায়, অল্প খায়? কেন পুরুষরা ভোজনপ্রিয়?
১০। কেন আমাদের মায়েরা পয়ত্রিশের পর স্থুলতায় ভোগে।
১১। কেন স্ত্রীদের মুখ গোলগাল, কেন পুরুষের মুখ লম্বাটে?
১২। কেন স্ত্রীদের চোখ সুন্দর? ভ্রু অনেক উপরে থাকে? কেন পুরুষের ভ্রু চোখের সাথে মিশে যায়?
আরো এক কোটি প্রশ্ন!

সংক্ষিপ্ত আলোচনার আগে দুই লাইনে বলি- সেক্সুয়াল ডাইমরফিজম কী!
পৃথিবীতে তখন এককোষী প্রাণিদের রাজত্ব। সবেমাত্র এককোষী থেকে বহুকোষী প্রাণির আবির্ভাব হল। শুরু হল পর্ব নামের জটিল টপিক। পর্বের নাম পরিফেরা।
যেহেতু প্রথম পর্ব, স্বাভাবিকভাবে এই পর্বের প্রাণিদের কিছুই ঠিকঠাক নাই।
মানুষ যেমন সবাই একই রকম। হাত পা মাথা নাক কান থাকবে। পরিফেরার হাত পা মাথা নাই। কেউ একই রকম দেখতে নয়। একই প্রজাতির পরিফেরার কেউ দেখতে গাছের মত, কেউ দেখতে ফুলদানির মত কেউবা দেখতে ঘন্টার মত।
আবার পরিফেরার প্রাণিদের গায়ের রঙ খেয়াল করো। কেউ দেখতে লাল, কেউ নীল, কেউবা সবুজ। নানা রঙ্গের।
এদের নারী পুরুষ বলে আলাদা কিছু নাই। সবাই একই গঠনের।
এরপর আরেকটু উন্নত প্রাণি চলে আসল। শুরু হল- নিডারিয়া নামক প্রাণি। এদের আকৃতি সবারই কাছাকাছি। একই ধরণের। একই প্রজাতির সবার রঙ একই রকম। কিন্তু কেউ পুরুষ কিংবা স্ত্রী নয়। সবাই একই। বা উভলিঙ্গিক। কিন্তু একই দেহে প্রজনন হয় না। একজনের শরীরের শুক্রাণু আরেকজনের ভেতর যাবে। ফলে নতুন প্রাণি জন্ম নিবে। অথচ কেউ নারী বা কেউ পুরুষ নয়।
এদের চেয়েও উন্নত পর্ব চলে আসল।
নাম হল- প্লাটিহেলমিনথিস। প্রজনন ব্যবস্থার খানিকটা উন্নয়ন হল। এরা উভলিঙ্গিক। নিজেরা একাএকা, নিজের শরীরের ভেতরেই শুক্রাণু ডিম্বানুর মিলন ঘটিয়ে বাচ্চা জন্ম দেয়। ফলে আরেকজন প্রাণি লাগে না। যেমন ফিতা কৃমি। প্রজনন বা বংশবিস্তারের জন্য দুটো প্রাণী লাগে না বলেই, একটা কৃমি একাএকাই কোন বড় প্রাণির শরীরের ভেতরে বংশবিস্তার করতে পারে।
এরপর আসল নতুন পর্ব। নেমাটোডা নামক কৃমি। প্রথমবার পৃথিবীতে আসল নারী ও পুরুষ প্রাণি। এরা একা সন্তান জন্ম দিতে পারে না। সবসময় দুট প্রাণি লাগে। একজন হবে নারী আরেকজন হবে পুরুষ। যাদের দেখলেই বোঝা যায়, কোনটা নারী আর কোনটা পুরুষ। দুই ধরণের শরীরের দুই ধরণের গঠন।
নেমাটোডার পরের সব পর্বেই এই সুবিধা আছে।
ঘাসফড়িং আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণি। তাদেরও নারী ও পুরুষ আছে। আমরা এই অধ্যায় পড়ার সময় স্ত্রী ও পুরুষের পার্থক্য দেখতে পাই বইতে।
মানুষ নিজেও নারী ও পুরুষভেদে আলাদা। দুইটি (Di) আলাদা লিঙ্গের (sex) শারিরীক গঠনগত (Morphology) পার্থক্যের নাম- Sexual Di-Morphism.
উপরের সুবিশাল আলোচনা টানার কারণ আছে।
আমি আসলে ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছিলাম, নারী ও পুরুষের শারিরীক গঠনে কেন পার্থক্য থাকে?
এবার আসি, তুলনামূলক ব্যাখ্যায়।
স্ত্রীদের হরমোনের নাম- ইস্ট্রোজেন।
পুরুষের হরমোনের নাম- টেস্টোস্টেরন (টেস্টোস্টেরন স্ত্রীদেরও আছে কিন্তু পরিমানে খুবই কম)।
টেস্টোস্টেরন পরিমাণ যার যতবেশি, তার পেশি ততবেশি থাকবে। যার যত বেশি পেশি, তার ততবেশিই হিংস্রতা থাকবে।
পেশি বেশি হলে সেই পেশিগুলোকে পুষ্টি এবং অক্সিজেন দেবার জন্য মোট রক্তের পরিমাণও বেশি হতে হবে। বেশি রক্ত হলে রক্তকণিকাও (পূর্ণবয়স্ক স্ত্রীদেহে লোহিত কনিকাঃ ৪৮ লাখ/ঘনমিলি কিন্তু পুরুষে ৫৪ লাখ/ঘন মিলি রক্ত) বেশি হবে।
বেশি রক্তের জন্য রক্তনালীর ভেতরের ব্যাসও বেশি পুরুষে।
হৃদপিন্ড যেহেতু সারাদেহে বেশি বেশি কোষে রক্ত দিবে, তাই পাম্প করবে খুব শক্তি নিয়ে। ফলে সেই চাপকে ধারণ করার জন্য রক্তনালীর দেয়ালও পুরু হবে।
বেশি কোষে রক্ত দেবার জন্য, বেশি চাপ দিতে হবে। চাপ দিবে হৃদপিন্ড। তাই হৃদপিন্ডের দেয়ালও পুরু হবে। পুরু দেয়াল হলে বেশি চাপ সহ্য করতে পারে।
হৃদপিন্ডের দেয়াল পুরু হলে, রক্ত পরিমানে বেশি থাকলে পুরুষের হৃদপিন্ডের আকারও বেশি হবে।
খেয়াল করুন, হৃদপিন্ডের দেয়াল পুরুষে বেশি পুরু। পুরু হবার একটা সুবিধা আছে। হার্ট এটাকের পরিমাণ সমান হলেও পুরুষ সহজে মারা যাবে না। কারণ তার দেয়াল পুরু, কোষ বেশি। কিছু কোষে এটাক হলেও বাকীকোষগুলো হৃদপিন্ডকে চালিয়ে নিবে।
বেশি রক্ত হওয়ায়, বেশি রক্তকে ফিল্টারের জন্য কিডনির আঁকারও বেশি হতে হয়। ফলে পুরুষ দেহে কিডনির আঁকার ও ওজন স্ত্রী অপেক্ষা বেশি।
স্ত্রীদেহের সব উল্টো।
পেশি কম।
পেশি কম হবার জন্য কম পেশিকোষে পুষ্টি দেবার জন্য রক্তও কম।
রক্ত কম হবার কারণে রক্তকনিকাও কম।
কম পেশি ও কম রক্তের জন্য হৃদপিন্ডের আঁকারও কম। রক্তনালীর ব্যাস কম। পুরুত্ব কম। একইভাবে হৃদপিন্ডের আঁকার কম। তেমনই দেয়ালের পুরুত্বও কম। পুরুত্ব কম হবার কারণে একই পরিমাণ হার্ট এটাকে স্ত্রীরা বেশি ক্ষতিগ্রন্থ হয়। কারণ পেশি অল্প। সেগুলোতে এটাক হলে সাপ্লিমেন্টারি দেবার মত যথেষ্ট পেশিকোষ থাকে না। তাই মৃত্যুহারও বেশি।
রক্ত কম হবার কারণে কিডনির আঁকারও কম।
এবার আসি, স্তনগ্রন্থি।
যেহেতু স্ত্রীদের পেটে সন্তান ধারণ করতে হয়, তাই তার কোমরের আঁকারও বড়। অতিরিক্ত অঙ্গ (জরায়ু) ধারণ করার কারণে কোমরের (শ্রোণিদেশ) অস্থিচক্রের ব্যাস বেশি (পেলভিসের আঁকার বড়)।
সন্তান ধারণ করে না বলেই পুরুষের পেলভিসের ব্যাস কম।
স্ত্রীরা সন্তান জন্মের পর একটানা ছয়মাস সন্তানকে খাবার দিয়ে সুস্থ রাখবে। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল- এই খাবারের উৎস সেই শরির, যে শরীর থেকে কজন সন্তান জন্ম নেয়। পুরুষ যেহেতু সন্তান জন্ম দেয় না, তাই তার স্তনগ্রন্থি থাকলেও সেটা সক্রিয় নয়।
সক্রিয় স্তনগ্রন্থির প্রচ্ছছেদের ছবি যদি তোমরা কখনো দেখো, দেখতে পাবে স্তনের ভেতরে তেঁতুল পাতার মত অসংখ্য দুগ্ধ নিঃস্মরণকারী গ্রন্থি বা থলি আছে। থলিগুলো নালীর মাধ্যমে নিপলের কাছে এসে একসাথে হয়ে বের হয়। এতগুলো তেঁতুল পাতার মত একটার পর একটা সাজানো স্তনগ্রন্থির থলিকে চাপ কিংবা আঘাতের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য চারপাশে চর্বি জমা হতে থাকে। চর্বি স্তনগ্রন্থিকে আঘাত ও দুগ্ধ প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
কেন পুরুষের শক্তি বেশি?
গবেষণা নানা কথা বলে। দেহের উপরের অংশে পুরুষের যা শক্তি, নারীদের তার অর্ধেক শক্তি। আবার শরীরের নিচের অংশের শক্তি পুরুষের থেকে এক তৃতীয়াংশ কম। কেন?
পুরুষ খাবার খেলে সেগুলো দ্রুত হজম হয়। দ্রুত হজম হলে দ্রুত শক্তিও উৎপন্ন হয়। পেশিকে দ্রুত শক্তি দিতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই পুরুষের পেশিশক্তি হবে স্ত্রীদের চেয়ে বেশি।
আবার নারীদের ক্ষেত্রে হজমকৃত খাবার ধীরেধীরে শক্তিতে পরিণত হয়। ফলে খাবারের একটা বড় অংশ শক্তি না হয়ে আগেই চর্বিতে পরিণত হয়। এই চর্বি জমা থাকে স্তনে, পেটে, কোমরে এবং বাটক-এ। চর্বির বিশাল একটি অংশ জমা হয় চামড়ার নিচে, সারাশরীরে। ফলে স্ত্রীদের চামড়া মোলায়েম এবং নরম হয়।
বুদ্ধিমত্তা এবং মস্তিষ্কের আয়তনেও একটা পার্থক্য আছে।
পুরুষের মস্তিষ্কের আঁকার স্ত্রীদের তুলনায় ১০ ভাগ বড়। কিন্তু পুরুষরা ব্যবহার করে মস্তিষ্কের একপাশ (সেরেব্রাল হেমিস্ফেয়ার)। স্ত্রীদের ১০% ছোট হলেও মস্তিষ্কের দুই অংশের মধ্যে অনেক বেশি স্নায়ু সংযোগ থাকে। ফলে দুটো অংশই স্ত্রীরা ব্যবহার করতে পারে। আরো নিখুঁতভাবে, শুদ্ধভাবে কাজ করতে পারে। এজন্যই ছোটখাটো জিনিস ছেলেরা ভুলে গেলেও মেয়েরা সহজে ভুলে যায় না।
স্ত্রীদের হরমোনের নাম- ইস্ট্রোজেন। পুরুষের হরমোনের কারণে পুরুষরা অনেক সুবিধা পেলে নারীরা তাদের হরমোনের ক্ষেত্রে তেমন সুবিধা পাবে না?
অবশ্যই পাবে।
ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণে বিশাল পরিবর্তন দেখা যায় স্ত্রীদের মধ্যে।
ধরা যাক, মুখের কথা।
স্ত্রীদের ভ্রু ছেলেদের তুলনায় উঁচুতে। ঠোঁট ছেলেদের চেয়েও বেশি পেশিবহুল। মুখমণ্ডল গোলাকার। কিন্তু থুতনী খাঁড়া এবং সহজেই মুখ থেকে আলাদা বোঝা যায়।
ছেলেদের ক্ষেত্রে গোলগাল নয়। ভ্রু চোখের সাথে লাগা। ঠোঁটে স্নিগ্ধতা নেই। মুখ গোলগাল না হয়ে খানিকটা চার কোনাকার বা লম্বাটে।
ইস্ট্রোজেন হরমোনের কারণেই স্ত্রীরা পুরুষের চেয়ে বেশিই শান্ত, সুস্থির, ভদ্র, নম্র।
এমনই... সেক্সুয়াল ডাইমরফিজমের কারণে আর হাজার হাজার পার্থক্য আছে স্ত্রী ও পুরুষের দৈহিক গঠনের মাঝে।

-ডা. রাজীব হোসাইন সরকার