আধুনিক এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কিত ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দের শুরুর দিক থেকেই আজকের এই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ছিল ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশ। যা এশিয়া উপমহাদেশ নামে পরিচিত ছিল। এই উপমহাদেশটি তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল।
প্রথমত; ভারত অনেকগুলো অঙ্গরাজ্যের সমন্বয়ে। দ্বিতীয়ত; পূর্ব বঙ্গ বা বাংলা বর্তমানে বাংলাদেশ। তৃতীয়ত; পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশ সমূহ বর্তমানে পাকিস্তান। অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এ উপমহাদেশ এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা বিদ্যায় তেমন কোনো উন্নতি সাধন করতে পারেনি। যার কারণে ব্রিটিশরা এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা বিদ্যার উন্নতির জন্য এই উপমহাদেশটির কিছু অঙ্গরাজ্য সমূহে ‘স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি- রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ’ তৈরি করে বিভিন্ন ‘মেডিকেল স্কুল’ সমূহের মাধ্যমে চিকিৎসা বিদ্যায় লাইসেন্সশিয়েট অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (এল.এম.এফ) কোর্স মেম্বার অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (এম.এম.এফ) কোর্স পরিচালনা করেছিলেন। যাতে করে এই উপমহাদেশে মধ্যম মানের চিকিৎসক তৈরি করা সহজতর হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বককালে পূর্ব বঙ্গে মোট ৬ টি মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমত ১৮৭৫ সালে ঢাকা মেডিকেল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় মিডফোর্ড হাসপাতাল কে অন্তর্ভূক্ত করে (যা বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ)। তারপর ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেট মেডিকেল স্কুল। ১৯২৫ সালে আরেক টি মেডিকেল স্কুল ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ মেট্রিকুলেশন/ মেট্রিক পাশ করার পর এ সকল মেডিকেল স্কুল সমূহে ৪ বছর মেয়াদী এল.এম.এফ কোর্স করা যেত। এছাড়াও তৎকালীন (১৮২২-১৯৬০ সাল) সময়ে ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তানে আরো কিছু মধ্যম মানের ডাক্তারি কোর্স যেমন; লাইসেন্সশিয়েট অব মেডিসিন এন্ড সার্জারি- এল.এম.এস; ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন এন্ড সার্জারি- ডি.এম.এস; ডিপ্লোমা অব মেডিকেল প্র্যাকটিশনার- ডি.এম.পি; লাইসেন্সশিয়েট- এল.এস.এম.এফ; মেম্বারশিয়েট- এম.এস.এম.এফ; লাইসেন্সড্ টু মেডিকেল প্র্যাকটিস- এল.এম.পি চালু ছিল। রেফারেন্স; বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এ্যাক্ট-১৯৭৩; ১৯৮০; ইন্ডিয়া মেডিকেল কাউন্সিল এ্যাক্ট-১৯৫৬; পাকিস্তান মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এ্যাক্ট ইত্যাদি।
ব্রিটিশদের সৃষ্ট স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি সমূহ হল স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ইষ্ট বেঙ্গল, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ওয়েষ্ট বেঙ্গল, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব মহারাষ্ট্র, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ওয়েষ্ট পাকিস্তান, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ইষ্ট পাকিস্তান, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব পাঞ্জাব, ইত্যাদি। এরই ফলস্রুতিতে ১৯১৪ সালে তৈরি হয় দি স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ইষ্ট বেঙ্গল, এবং ১৯৪৭ সালে তা রূপান্তরিত হয়, দি স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব ইষ্ট পাকিস্তান, পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে, এটিকে ‘দি স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব বাংলাদেশ- বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ’ নামকরণ করা হয়। ১৯১৪ সাল থেকে ইস্ট বেঙ্গল রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ আমাদের পূর্ব বঙ্গে এল.এম.এফ কোর্স ১৯৪৮ সাল থেকে এম.এম.এফ কোর্স চালু করে। এল.এম.এফ, এম.এম.এফ কোর্স দু’টি ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) চালু ছিল। উল্লেখ্য, ১৯১৪ সালের পূর্বে এই পূর্ব বঙ্গে চিকিৎসা বলতে ছিল কেবল দেশজ কবিরাজ ও হেকিমী চিকিৎসা। অবশ্য ইংরেজরা ১৮২২ সালে কলকাতায় অাধুনিক এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় সর্ব প্রথম ‘নেটিভ মেডিকেল ইন্সটিটিউট’ স্থাপন করলে সেখানে বাংলা ও বিহারের কিছু শিক্ষার্থী এল.এম.এফ; এল.এম.পি সমমান কোর্স করার সুযোগ পেত। তারপর ১৮৩৫ সালে উপমহাদেশে সর্ব প্রথম ‘কলকাতা মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস সমমান কোর্সে বাংলা ও বিহারের হাতে গোনা অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার সুযোগ পেত। পাকিস্তান পিরিয়ড়ে পূর্ব বাংলার কিছু কিছু জায়গায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রচলন শুরু হয়। সেই সাথে আস্তে আস্তে পূর্ব বাংলায় এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা বিদ্যার উন্নতি হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে সর্ব প্রথম ১৯৪৬ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক এম.বি.বি.এস ডিগ্রি, ১৯৬১ সালে দন্ত চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতক বি.ডি.এস ডিগ্রি চালু হয়। এই স্নাতক ডিগ্রি গুলো পরিচালিত হচ্ছে এদেশের বিভিন্ন পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। পরবর্তীতে এদেশে চিকিৎসা বিদ্যায় ও দন্ত চিকিৎসা বিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু হয়। সেই সাথে ১৯৫৭ সালের দিকে ব্রিটিশ- পাকিস্তান পিরিয়ডের এদেশের মধ্যম মানের এল.এম.এফ, এম.এম.এফ চিকিৎসকের কোর্স দু’টি তৎকালীন সরকার বন্ধ করে দেয়। তবে, ঐ কোর্স বন্ধ করার পূর্বে তৎকালিন পূ্র্ব পাকিস্তান- বাংলাদেশ সরকার ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিকেল কলেজে ( প্রাক্তন ঢাকা মেডিকেল স্কুল) ব্রিটিশ-পাকিস্তান পিরিয়ডের চিকিৎসা বিদ্যায় লাইসেন্সশিয়েট অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি, মেম্বার অব মেডিকেল ফ্যাকাল্টি (এল. এম. এফ; এম. এম. এফ) সার্টিফিকেট কোর্সধারী ডিপ্লোমা সমমান চিকিৎসকদের ২ বছর মেয়াদে কনডেন্সে এমবিবিএস কোর্স করিয়ে প্রশাসন, জেলা ও মহুকুমা হাসপাতালে নিয়োগ প্রদান করেন। পরবর্তীতে এই চিকিৎসকরা অনেকেই মেডিকেল অধ্যাপকও হয়েছেন। একই ভাবে তৎকালীন ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তানের অধিকাংশ (এল. এম. এফ; এম. এম. এফ) সার্টিফিকেট কোর্সধারী ডিপ্লোমা সমমান চিকিৎসকগণ ২ বছর মেয়াদে কনডেন্সে এমবিবিএস কোর্স করার সুযোগ পান। উল্লেখ্য, (এল. এম. এফ; এম. এম. এফ) সার্টিফিকেট কোর্সধারী ডিপ্লোমা সমমান চিকিৎসকগণ রাষ্ট্র কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ও উপসহকারী সার্জন পদবিতে সরকারি চাকরি করতেন। এ সকল চিকিৎসকদের প্রত্যেকে ‘মেডিকেল কাউন্সিল’ কর্তৃক নিবন্ধিত ছিলেন। চিকিৎসা পোশার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদবি নয় বিদায় পরবর্তীতে মেডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট পদবি টি পরিবর্তন করে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার রাখা হয়। এবং সহকারী সার্জন পদবি টি গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকদের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। ১৯৪৬ সালের পূর্বে বর্তমান বাংলাদেশে যখন স্নাতক এমবিবিএস ডিগ্রি কিংবা স্নাতক ‘মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠান কোনোটাই ছিল না, তখন ‘মেডিকেল স্কুল’ পাশ এই (এল. এম. এফ; এম. এম. এফ) সার্টিফিকেট কোর্সধারী ডিপ্লোমা সমমান চিকিৎসকগণ আবহমান গ্রাম বাংলা, পল্লী, শহর নির্বিশেষে সকল মানুষের সর্বোত্তম এ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন। রেফারেন্স বুক; মিডফোর্ড হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল স্কুল ইতিহাস ও ঐতিহ্য ১৮৫৮- ১৯৪৭। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইন্ডিয়ান মেডিকেল সার্ভিস, নেটিভ মেডিকেল ইন্সটিটিউট ও কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইতিহাস ও ঐতিহ্য ১৭৬৪-১৮৩৫ বুক।
পর সমাচার, ১৯৭১ সালের পরে এই যুদ্ধ পীড়িত ও যুদ্ধাহত নব স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে, অনেক গরীব, দুস্থ, অসহায় মানুষের সামান্য রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানও সরকারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেটা মনে করতে হলে, আমাদের সেই পূর্বের কথা স্মরণ করতে হবে যখন সামান্য কলেরা রোগে গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য হয়ে যেত, অসংখ্য মানুষ মারা যেত। যা জনবান্ধব বঙ্গবন্ধু’র সরকারকে ভাবিয়ে তোলে। ঠিক তখনি স্বল্প সময়ে সবার জন্য মৌলিক অধিকার চিকিৎসা সেবা প্রদান বাধ্যতামূলক করার জন্য বঙ্গবন্ধু’র সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ১৯৭৩-১৯৭৮ ইং মোতাবেক পূ্র্বেকার এলএমএফ, এমএমএফ কোর্সের কারিকুলাম অনুসারে চিকিৎসা বিদ্যায় ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি ‘ডিএমএফ’ কোর্স আন্তর্জাতিক ভাবে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে আসেন। ১৯৭৬ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদিত, রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ কর্তৃক অধিভূক্ত, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল স্বীকৃত মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল ( ম্যাটস্ ) এর মাধ্যমে ‘ডিএমএফ’ ডিপ্লোমা চিকিৎসকতা পেশা কোর্স টি প্রথম যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এদেশে ৯ টি সরকারি ম্যাটস্ ও প্রায় ২০৪ টি বেসরকারি ম্যাটস্ ডিপ্লোমা চিকিৎসকের ‘ডিএমএফ’ কোর্স টি পরিচালনা করে আসছে। এখানে ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯০,০০০ নব্বই হাজার। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ১২ হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক ‘উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার’ পদে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপ-হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল সহ বিভিন্ন চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। এছাড়াও প্রায় ১৫,০০০ পনের হাজার ডিপ্লোমা চিকিৎসক বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, দেশি বিদেশি এনজিও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে কর্মরত আছেন। বর্তমানে নতুন পাশ করা অনেক ডিপ্লোমা চিকিৎসক বেকার আছেন, যাদেরকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে পদায়ন করা হলে কমিউনিটির জনগণের চিকিৎসা সেবায় বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হবে বলে সাধারণ জনগণ মনে করেন। তখন কমিউনিটি ক্লিনিক সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক রোল মডেল হিসেবে আরো দৃঢ় ভাবে উপস্থাপিত হবে। এখনই এ বিষয়ে সরকারের জরুরি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
বাঙ্গালীর স্বপ্নদ্রষ্টা মুজিব বোঝতে পেরেছিলেন যে, এই ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন হবে, তাই তিনি বারং বার প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পনের অধ্যায়ের ৫২০ ও ৫২১ পৃষ্টায় লেখে রেখে গেছেন এই মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট প্র্যাকটিশনার-ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের যেনো মেডিকেল সায়েন্সে কনডেন্সে উচ্চশিক্ষা ব্যাচেলর অব মেডিসিন এন্ড ব্যাচেলর অব সার্জারী ‘এমবিবিএস’ কোর্স করার সুযোগ দেয়া হয়। এ পরিকল্পনায় ডিএমএফ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়া ছিল । মহামানব মুজিব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, অন্যান্য ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের যেমন; হোমিওপ্যাথি, ইউনানী, আয়ুর্বেদিক, নার্সিং, মিডওয়াইফারী, ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল টেকনোলজী (ল্যাব, ফিজিওথেরাপি, রেডিওগ্রাফার, রেডিওলোজী), ফার্মেসি, কৃষি, ফিশারিজ, ফরেস্ট্রী প্রভৃতির উচ্চশিক্ষার ন্যায় ডিএমএফ ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জন্যেও উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বাঙ্গালীর প্রাণপুরুষ মুজিব বোঝতে পেরেছিলেন যে, সারাবিশ্বে সায়েন্স বেক গ্রাউন্ডে ১২ ক্লাস হায়ার সেকেন্ডারি পর্যন্ত পড়ে মেডিকেল-ডেন্টাল সায়েন্সে স্নাতক এমবিবিএস, বিডিএস, (স্নাতক এমডি-দেশের বাহিরের) ইত্যাদি পড়তে পারলে, এসএসসি সায়েন্স বিভাগে পাস করে ৪ চার বছর (ডিএমএফ) ডিপ্লোমা পাস করার পর বিএম&ডিসি নিবন্ধিত ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ (সেকেন্ডারি প্লাস ডিপ্লোমা ৪ বছর) সর্বোমোট ১৪ ক্লাস পাশ করার পর অবশ্যই ‘এমবিবিএস’ ডিগ্রি কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা রাখেন। মহাকালের মহানায়ক মুজিব বোঝতে পেরেছিলেন যে, উচ্চ মাধ্যমিকে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, বায়োলজী সহ এইচএসসি পাশ করে একজন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য মেডিকেল সায়েন্সে ‘এমবিবিএস’ অর্জনের সুযোগ পেলে মাধ্যমিকে পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, বায়োলজী সহ এসএসসি পাশ করে ডিএমএফ কোর্সের ডিপ্লোমা মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ম্যাটস্ সমূহে মেডিসিন, সার্জারী, গাইনী এন্ড অবস্টেট্রিকস্, এনাটমী, ফিজিওলজী, প্যাথলজী এন্ড মাইক্রোবায়োলজী, বায়োকেমিস্ট্রি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফার্মাকোলজি, মেডিকেল জুরিসপ্রুডেন্স, কমিউনিটি হেলথ্, হেলথ্ ম্যানেজমেন্ট, বেসিক ইংলিশ, কম্পিউটার সায়েন্স ও মেডিকেল ইথিক্স বিষয়ে ১ বছরের ইন্টার্নীশিপ সহ সর্বোমোট ৪ চার বছর পড়াশোনা করে ‘ডিএমএফ’ ডিপ্লোমা পাশ করার পর অবশ্যই মেডিকেল সায়েন্সে ‘এমবিবিএস’ কোর্সে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। বাঙ্গালীর স্বপ্নদ্রষ্টা মুজিব বোঝতে পেরেছিলেন যে, উচ্চশিক্ষা রাষ্ট্রের প্রতিটা নাগরিকের মৌলিক অধিকার। তাই ডিএমএফ পাশ ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করা হলে, উন্নত দেশের ন্যায় নিঃসন্দেহে বাংলাদেশেও চিকিৎসা সেবা খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধিত হবে। আজ বাঙ্গলীর স্বপ্নদ্রষ্টা মুজিব নেই, তাই তার স্বপ্ন প্রথম বার্ষিকী পরিকল্পনা ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন হয় নি। যে প্রাণ পুরুষের জন্ম না হলে, এই সোনার বাংলার জন্ম হতো না, বাংলাদেশের জন্ম হতো না, যার জন্ম না হলে বাঙ্গালী জাতি মুক্তি পেতো না, আজও সেই মহামানবের স্বপ্ন প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সমগ্র অসমাপ্তই রয়ে গেল! তবুও ডিপ্লোমা চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন, সেই দিনের অপেক্ষায় থাকেন, যে দিন আবারো কেউ আসবে, আসবেই বাঙ্গালীর প্রাণপুরুষ মুজিবের আদর্শ বক্ষে ধারন করে। যার চেতনার মূলমন্ত্র হবে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী সন্তান বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সমগ্র বাস্তবায়ন করা। সকল ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের প্রাণের দাবি, উচ্চতর শিক্ষায় সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক সৃষ্ট ডিএমএফ ডিপ্লোমা চিকিৎসকদের জন্য ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ‘ঢাকা প্রকৌশলী ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ ডুয়েট এর মতো স্বতন্ত্র ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করা হোক। ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ স্বপ্ন দেখেন যে, তারা চিকিৎসা বিদ্যায় উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসক হয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবা খাত কে জনগণের দোর-গোড়ায় পৌঁছে দেবেন, চিকিৎসা সেবা খাতকে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজড্ করবেন।
ডিপ্লোমা চিকিৎসকতা পেশা একদিনে গড়ে উঠেনি। কয়েকজন স্বীয় স্বার্থবাদী ও নিমকহারামীদের জন্য এর অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে না।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক : ডা. এম. মিজানুর রহমান (জনস্বাস্থ্যবিদ)
তথ্য, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ সম্পাদক, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা মেডিকেল এসোসিয়েশন- বিডিএমএ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ।
সাংগঠনিক সম্পাদক,
পাবলিক হেলথ্ স্পেশ্যালিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- পিএইচএসএবি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ।
0 মন্তব্য(গুলি):