💠 গল্পে গল্পে ইন্টার্ন শিখি সিরিজ-১ পার্ট-২

আসসালামু আলাইকুম, আমার প্রিয় ছোট ভাই/বোন তোমরা যারা নব্য ইন্টার্ন শিপ এ যোগ দিয়েছ সবাইকে আমার এবং প্রিয় মোমা গ্রুপের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমি মোট কয়টা সিরিজ লিখতে পারব জানিনা তবে চেষ্ঠা করব তোমাদের নতুন কিছু তথ্য দিয়ে শেখানোর। গত পর্বে আমি তোমাদের ইন্টার্ন এর জন্য প্রয়োজনীয় ইনগ্রেডিয়েন্স গুলো নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ তোমাদের শিষ্ঠাচার ও নীতিমালা নিয়ে গল্প শোনাব। তোমাদের ইন্টার্ন জীবনে এই শিক্ষাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কথায় আছে #ব্যবহারে বংশের পরিচয়। আর তোমরা যেহেতু ভবিষ্যত ডাক্তার হতে চলেছ তাই তোমাদের এই সদ্বব্যবহার ও নিয়মশৃঙখলা জানাটা আবশ্যক। তাহলে চলো মূল গল্পে যাওয়া যাক....

🕴কাব্যঃ সালমান প্রোগ্রাম শুরু হতে মনে হয় আরো কিছুক্ষন সময় লাগবে। দেখেছিস ভাইয়া/আপুরা আমাদের বরন করে নেয়ার জন্য কত্তসুন্দর করে স্টেজ সাজিয়েছে, আমাদের প্রত্যেকের হাতে গোলাপ, রজনীগন্ধা আর একটি কলম, প্যাড গিফট করেছে। আমি তাদের এই আয়োজনে সত্যিই অনেক মুগ্ধ। তারা আমাদের প্রতি এতোটা আন্তরিক হবে আমার কল্পনায় ছিলনা। আর দেখ মনির ভাই কল দিলো আর এখন আমি কল দিচ্ছি বিজি পাচ্ছি। যাই হোক চল আমরা সাঈদ ভাইয়ের সাথে গল্প করি। ওই তো ভাইয়াকে সামনে দেখা যাচ্ছে। সাঈদ ভাইকে চিনিস তো! ভাইয়ার গল্প অনেকের মুখে শুনেছি চল পরিচিত হয়ে আসি। আশা করি ভাইয়ার থেকে আমরা সঠিক দিকনির্দেশনা পাব ইনশাআল্লাহ্‌।

🕴সালমানঃ কাব্য তুই ঠিক বলেছিস। চল চল আর দেরি না করে ভাইয়ার সাথে দেখা করি, নিশ্চই ভাইয়া আমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারবেন। 

🕴কাব্যঃ আসসালামু আলাইকুম, সাঈদ ভাইয়া! কেমন আছেন??

🕴সাঈদ ভাইঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম! ভাইয়া! আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি ভালো আছি! তোমরা কেমন আছ! 

🕴কাব্যঃ আমরাও আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো আছি ভাইয়া! ভাইয়া, আমি কাব্য আর ও আমার বন্ধু সালমান! আমরা আজকে নতুন ইন্টার্নশীপ এ জয়েন করেছি! আজ আমাদের প্রথম দিন এই হাসপাতালে!  তাই ভাইয়া আমরা দুজন আপনার থেকে সঠিক দিক নির্দেশনা নেয়ার জন্য আসছি। আশা করি ভাইয়া আপনি আমাদের সঠিক দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন। 

🕴সাঈদ ভাইঃ কাব্য তোমাদের দুইজনকেই অভিনন্দন জানাচ্ছি আমাদের এই হাসপাতালে ইন্টার্ন করার পরিকল্পনা গ্রহন করায়। তোমরা নিশ্চই জানো যে, আমাদের এই হাসপাতাল টি বাংলাদেশের জেলা সদর হাসপাতাল গুলোর মধ্যে সেরা ১০ এ আছে, এখানকার নিয়মশৃঙখলা, নীতিমালা, স্টাফদের ব্যবহার, কর্মকর্তা দের সৌজন্যতা সব চেয়ে আর্কষনীয় ও চমৎকার। আমরা যারা এখানে ডিউটি করি সবাই মিলে মিশে একটা পরিবারের মত থাকি। আমাদের মধ্যে কোন হিংসা বিদ্বেষ, রাজনীতি, কূটনীতি কোন কিছুই এখানে নেই। তাই ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী থেকে শুরু করে ১ম শ্রেনীর কর্মকর্তা সবাই আমরা এক সূত্রে গাথা। আমাদের এখানে কাজের পাশা পাশি পেশাটাকে সম্মান করা হয় বেশি। কেউ একজন সুইপার বলে যে সে সম্মান পাবেনা সেটা ঠিক নয়। মানুষ হিসাবে আমাদের সকলকেই সমান দৃষ্টিতে দেখা ও সম্মান করা উচিত। কারন তোমরা যদি কাউকে বিন্দুমাত্র সম্মান করো অবশ্যই অন্যের থেকে তারচেয়ে বেশি সম্মান পাবে। এটাই জগতের নিয়ম।

🕴সালমানঃ ঠিক বলেছেন ভাইয়া, এটা একটা পারিবারিক শিক্ষা! প্রতিটি মানুষকে সম্মান করা ও সমান চোখে দেখা। কারন একমাত্র অন্যের প্রতি সম্মান দেখালেই নিজের সম্মান বৃদ্ধি পায়! তাই আমাদের উচিত সকলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা। 

🕴সাঈদ ভাইঃ সালমান, কাব্য তোমাদের আরো কিছু উপদেশ দেই। তোমাদের এখানে যারা সিনিয়র ভাই/আপু আছেন সবাইকে দেখলে সালাম দিবে! সালাম ইসলামের একটি সৌন্দর্য!  একমাত্র সালামের মাধ্যমে শক্রুকেই বন্ধু বানানো সম্ভব। আর তোমার ইয়ার মেট যদি একদিন আগেও হাসপাতালে জয়েন করে তাহলে তাদেরকেও সম্মান দিয়ে কথা বলবে, ওয়ার্ডের নার্স আপু, ব্রাদার, ক্লিনার, সুইপার, স্যার/ম্যাডাম সবার সাথে আন্তরিকভাবে কথা বলবে! দেখা হলেই সালাম দিবে। কখনো এমন ব্যাবহার করবে না যাতে তারা কষ্ট পান। কারন তোমারা এখানে শেখার জন্য আসছ তাই তোমাদের নার্সের থেকে যেমন শেখার আছে তেমনি একজন ক্লিনার বয় এর থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। তাই কোন ভাবেই কোন কাজকে অবহেলা কিংবা অসম্মান করবেনা। আশাকরি আমার কথা গুলো তোমরা মনোযোগ দিয়ে শুনেছ এবং সেগুলো মেনে চলার চেষ্ঠা করবা। তোমাদের সাফল্য কামনা করি! আর হ্যা তোমাদের ইউনিফর্ম এবং প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো স্ব স্ব ভাবে ব্যবহার করবে এবং যত্ন করবে। প্যাড,কলম, বিপি মেশিন, স্টেথোস্কোপ ও প্রয়োজনীয় জিনিস গুলি প্রতিদিন সাথে করে নিয়ে আসবে। আর নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ১০-১৫ আগে এসে হাসপাতালে উপস্থিত হবে। মনে রাখবে হাসপাতালে আসার নির্দিষ্ট সময় আছে কিন্তু যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় নেই। তোমাদের এই ১ বছর অনেক বেশি পরিশ্রম ও সময় দিতে হবে। তোমরা যত বেশি সময় দিয়ে শিখতে পারবা ভবিষ্যতে তোমরা তত বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবা, এবং সারা জীবন এই শিক্ষাটাই তোমাদের কাজে লাগবে। আজ এই পর্যন্ত আগামীকাল তোমাদের ওয়ার্ডে কিভাবে কাজ করতে হয়, রেজিস্টার কিভাবে মেইনটেইন করতে হয়, সেগুলো নিয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিব ইনশাআল্লাহ্‌। বড্ড দেরি হয়ে গেল মনে হচ্ছে, ওই দিকে মনে হয় প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেছে! চল চল তাড়াতাড়ি প্রোগ্রামে এটেন্ড করি।😍😍

🕴কাব্যঃ অসংখ্য ধন্যবাদ সাঈদ ভাই! আপনি আসলেই অনেক ভালো একজন মানুষ! কত্ত সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন আমাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা গুলো শুকরিয়া ভাইয়া । ইনশাআল্লাহ্‌ দোয়া করবেন যেন আপনার পরামর্শ গুলো মেনে চলে সম্মান নিয়ে বেচে থাকতে পারি। সালমান চল ভাইয়াকে সাথে নিয়ে প্রোগ্রামে এটেন্ট করি, আমার আবার ইন্টার্ন দের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে হবে! বুঝতেই পারছিস প্যারায় আছি! জীবন টা বেদনার বুঝলি!  আমাকে একগ্লাস মুলার জুস দে!  খেয়ে বাচি।😜😜

🕴সালমানঃ হ! হ! তুই একাই মূলার জুস খা! আর আমি খাই আন্ডা। হারামি! তুই আসলেই একটা.... থাক সেটা আর না বললাম পাবলিক মাইন্ড করতে পারে... 🙃😋😆

পরবর্তী পার্টে তোমাদের ওয়ার্ডের প্রয়োজনীয় কাজ গুলো নিয়ে আলোচনা করার চেষ্ঠা করব ইনশাআল্লাহ্‌।  এই পর্যন্ত.....  সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন.. 😍😍

আমার সিরিজ ভালো লাগলে কমেন্ট করে উৎসাহ দিবেন আর আপনার ইন্টার্ন বন্ধুদের গ্রুপে যুক্ত করুন/মেনশন দিয়ে তাকেও পড়ার সুযোগ দিন। 

ধন্যবাদ💬💬

(চলবে)

Share This